অবশেষে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বাড়তে চলেছে। কারা কতো টাকা পাবেন দেখুন বিস্তারিত।
লোকসভা ভোটের আগেই রাজ্য বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল ১ এপ্রিল থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বর্ধিত ভাতা পাবেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মহিলা। এ মাস থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বাবদ যারা ৫০০ টাকা পেতেন তারা পাবেন ১০০০ টাকা। আর যারা ১০০০ টাকা পেতেন তারা পাবেন ১২০০ টাকা।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ মহিলা, যারা কর্মরত নন, তারাই এই প্রকল্পের সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারেন। সাধারণ মহিলারা মাসে মাসে এবার ১০০০ টাকা করে এবং আদিবাসী-তপশিলী জাতির মহিলারা মাসে ১২০০ টাকা করে পাবেন।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এই ভাতা বৃদ্ধির প্রকল্পে গোটা আর্থিক বছরে রাজ্য সরকারের মোট ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা খরচ হবে। রাজ্য সকারের দেওয়া অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যের মোট দু’কোটিরও বেশি মহিলা লক্ষীর ভাণ্ডারের টাকা পান।
গত জানুয়ারি মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য খরচ করা হয়েছিল ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারী মাসে সেই খরচ বেড়ে হতে চলেছে ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। কিন্তু কবে ঢুকবে সেই টাকা? বর্ধিত টাকা হাতে পাবেন কবে?
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে রাজ্যে চালু হয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। কিছুদিনের মধ্যেই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই প্রকল্প।
বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জেনারেল এবং এসসি এসটি মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য বরাদ্দ অর্থের ব্যবধানও কমিয়ে আনা হয়।
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, ২০২১ সালের মতোই এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সাফল্যকেই তুরুপের তাস করতে করেছে রাজ্যের শাসক দল। আর তাই রাজ্য বাজেটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী ভাবে করবেন এই প্রকল্পে আবেদন? কী ভাবে জানবেন আপনি যোগ্য কিনা?এরইমধ্যে রাজ্যের মহিলাদের জন্য সুখবর দিয়েছে নবান্ন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন করার পদ্ধতি আরও সহজ করা হচ্ছে। এতদিন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে আবেদন করতে হয়েছে দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে। কিন্তু এবার এই নিয়মে বড় বদল নিয়ে আসা হয়েছে।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের অনুদান বাড়াতে হবে। দাবি তুললেন বিজেপি সাংসদ। শুধু দাবিই নয়, এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠিও লিখলেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সেই চিঠির সারবত্তা তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যমেও পোস্ট করেছেন। হ্যাস ট্যাগ ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, পশ্চিমবাংলার মহিলাদের ১০০০ টাকা ও ১২০০ টাকা করে দিয়ে যে ভোটব্যাঙ্ক আপনি তৈরি করছেন, তাতে কিন্তু কিছু হয় না। ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তাতে অন্তত তাঁদের হাতখরচটা হবে।”
প্রশাসনিক মহলে অবশ্য কান পাতলে এই মুহূর্তে শোনা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ১০০০ টাকা ১৫০০ টাকায় পৌঁছবে, আর ১২০০ টাকা বেড়ে হবে ১৭০০ টাকা। প্রথম থেকে বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী দাবি করে আসছেন, তাঁদের ভাঁড়ারে টান রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই বিজেপি সাংসদ সেই টাকা বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করার কথা বলছেন। কারণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি ভাবছে, ভাঁড়ারে টান পড়লে, তাতে আরও বেশি কোণঠাসা হবে মমতা সরকার। উল্লেখ্য, অন্যান্য রাজ্যে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেছেন বিজেপি সাংসদ। ঝাড়খণ্ডে মহিলাদের দেওয়া হয় দেড় হাজার টাকা। সেটাও বলেছেন। আর উদাহরণ টেনেই বাংলার অনুদানও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, মমতা সরকারকে চাপে রাখতে গিয়ে, কোথাও মমতার প্রকল্পেরই স্বীকৃতি দিল বিজেপি। বিজেপি সাংসদ কোথাও স্বীকার করে নিলেন, বাংলার মহিলাদের কাছে এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তা কতটা! যদিও এই প্রকল্পের ধাঁচেই অন্নপূর্ণা প্রকল্প এনেছে বিজেপি। তার প্রচারও করছে বিজেপি নেতৃত্ব। কীভাবে সেই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে, ফর্ম ফিলাম করতে হবে, তারও পাঠ দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অন্নপূর্ণা প্রকল্পে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কটাক্ষ করতে গিয়ে, কোথাও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের’ স্বীকৃতিই দিল বিজেপি।
এই নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “ওর আগে বলুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করার আগে ওরা কেন কিছু চালু করেনি? নকল করছে ওরা। তার আবার বড় বড় কথা। জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর উচিত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া, বাংলার বকেয়া টাকাটা আগে দিক।”